বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরা। বঙ্গোপসাগরের
উপকুল বিধৌত আর সুন্দরবন স্নাত এই সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার মাঝ দিয়ে
প্রবাহিত ঐতিয্যবাহী কপোতাক্ষ নদের পূর্ব উপকুলে প্রতিষ্ঠিত বনউপবনে ঘেরা
নয়নাভিরাম দৃশ্য পটে সজ্জিত কুমিরা মহিলা ডিগ্রী কলেজ। যা খুলনা-সাতক্ষীরা
মহাসড়কের উত্তরপাশ সংলগ্নে অবস্থিত।অত্র এলাকা সমৃদ্ধশালী হওয়া সত্ত্বেও
নারীরা ছিল উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত জিবনের স্বাভাবিক করূণ পরিণতি ঘটছিল
নারীদের জীবনে। এ সময় নারী শিক্ষা দরদী নামে খ্যাত সাতক্ষীরা শহরবাসী
আব্দুল মোতালেব উদ্যোগ নিলেন কুমিরা মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার। ইতিমধ্যে
অসংখ্য প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ গড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্যদের
সাথে মিটিং করলেন কুমিরা মহিলা গড়ার কথা। যেই কথা, সেই কাজ। ১৯৯৩ সালের
জুন মাস- কুমিরা মহিলা কলেজের পথচলা শুরু হল। কপোতাক্ষের পূর্ব
উপকূলে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সংলগ্ন ছায়া ঢাকা এক মনোরম পরিবেশে প্রায় ৩
একর জমির উপর গড়ে উঠলো কুমিরা মহিলা কলেজ। আজীবন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আমাদের
অতি প্রিয় আব্দুল মোতালেব।
১৯৯৩ সালে বোর্ড
কর্তৃক অনুমোদন পাওয়ার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রখম বারেই
এইচ.এস.সি ছাত্রী ভর্তির সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৫০ জন। বর্তমানে এই কলেজে সর্বমোট
ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২,৫০০ জন। ১৯৯৬ সালে প্রথম এম.পি.ও ভুক্তির পর
একাডেমিক সফলতায় দ্রুত এগিয়ে গেছে কলেজটি। এইচ.এস.সি তে পর্যাপ্ত ছাত্রী
ভর্তি ও রেজাল্ট আশাব্যাঞ্জক। এই কলেজের ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণরত ।
স্নাতক, পাশকোর্চে বিএ, বিএসএস, বি কম
সহ বিএসসি পর্যন্ত অনুমোদিত। এমনকি স্নাতক, পাশকোর্চের রেজাল্ট এত ভাল যে,
এখানকার ছাত্রীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় ১২তম ও ১৭তম স্থান
লাভ করে। প্রায় ১০জন প্রথম শ্রেণীতে উর্ত্তীর্ণ হয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর
রেখেছে। এ কলেজের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তিতে
পরিণত করতে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিভাগ খোলা হয়েছিল।
১৯৯৮ সাল
থেকে এই বিভাগে বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত নির্দ্দিষ্ট আসন সংখ্যা সর্বদা
পরিপূর্ণ থাকে এবং শিক্ষার্থীর ফলাফল খুবই আশাতীত। এমনকি ৯০%, ৯৫% ছাত্রীরা
সাফল্যের সাথে উর্ত্তীর্ণ হয়।
১৯৯৮-৯৯
শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞানে অনার্স কোর্স চালুর মধ্য দিয়ে বর্তমানে এই কলেজে
মোট ৮টি বিষয়ের অনার্স পাঠদান করা হয়। এর মধ্য সমাজবিজ্ঞান, ভূগোল,
মনোবিজ্ঞান, গার্হস্থ্য অর্থনীতি, ম্যানেজমেন্ট, এ্যাকাউন্টিং,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস বিদ্যমান। লক্ষণীয় যে, বেসরকারী কলেজ হিসাবে এই
কলেজে গত ২০১১ইং সাল থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাষ্টার্স কোর্স চালু করা হয়েছে।
অনার্স বিষয়সমূহের ফলাফল খুবই সন্তোষজনক, এমনকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই
কলেজের ছাত্রী প্রথম শ্রেণীতে উর্ত্তীর্ণ হয়ে সারাদেশে ২য় স্থান অধিকার
করার কৃতিত্বপূর্ণ রেকর্ড করেছে।
কলেজটির অবকাঠামো ও প্রাকৃতিক
দৃশ্য খুবই মনোমগ্ধকর। জাতীয় মহাসড়ক সংলগ্ন ক্যাম্পাসের চারিদিকে উঁচু
প্রাচীর বেষ্টিত বড় গেইট দিয়ে সোজা রাস্তাটি চলে গেছে উত্তর পাশে কলা ও
বাণিজ্য বিভাগের ক্লাস রুমের দিকে। দুই ধারে মেহগুনি সহ ফলজ গাছের সাজানো
সারি। মেইন গেইটে ঢুকেই ডান পাশে শহীদ মিনার ও বামপাশে মসজিদ।
মেইন গেইটের বামপাশে মসজিদের পিছন থেকে লম্বা উত্তর-দক্ষিণে অনার্স
পাঠদানের শ্রেণী কক্ষের সারি। দক্ষিণ পাশের কক্ষটি তে পোষ্ট অফিসের
বরাদ্দকৃত কক্ষ।
কক্ষগুলোর সামনে ফলজ
বৃক্ষের ছায়া সুশীতল পরিবেশের ছাত্রীদের আড্ডার জায়গা। মেইন গেইট থেকে কলা
ভবন সংলগ্ন রাস্তার বামপাশে সিঁড়ি বাঁধানো বিশাল আকৃতির পুকুর এবং সংলগ্ন
স্নানের ঘর। যেখানে কলেজ ক্যাম্পাসে হোস্টেলের ছাত্রীরা নিত্যদিন ব্যবহার
করে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসাবে
আমাদের কলেজটিও ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে।
প্রয়াত সভাপতি
মরহুম আব্দুল মোতালেব যেভাবে কলেজেটিকে নিজের সন্তানের মত আগলে রেখেছিলেন
তদরুপবর্তমান সভাপতি সাতক্ষীরা-১ আসনের মাননীয় সংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের
সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান কলেজটির সর্বিক উন্য়ন করার আপ্রান
প্রচেষ্টায় আছেন।
সর্বশেষ দশটি বোর্ডের
মধ্যে যশোর বোর্ড-ই যে একমাত্র ডিজিটালাইজড শিক্ষা কার্যক্রমপরিচালনার জন্য
তথ্য প্রযুক্তির সফলতা জনগনের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন এ জন্য যশোর বোর্ড
কর্তৃপক্ষকে কুমিরা মহিলা কলেজের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ
ঞ্জাপন করছি।